ভ্যাকসিন নিয়ে প্রস্তুত হাসপাতাল প্রশাসন

কক্সবাজারে কুকুরে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা বাড়ছে

(উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে পৌর কর্তৃপক্ষ বেখবর)

শাহনেওয়াজ জিল্লু ॥
আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে কুকুরের উপদ্রব বাড়তে থাকে। বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী ভাদ্র ও আশ্বিন এই দুই মাস হলো কুকুরের উপদ্রবের মাস। কিন্তু চলতি বছরে দেখা যাচ্ছে সমগ্র জেলাজুড়ে কুকুরে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা নির্দিষ্ট জ্ঞাত সময়ের মাস দুয়েক আগে থেকেই বেড়ে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে- প্রাকৃতিকভাবে ভাদ্র মাস শুরু হওয়ার আগে থেকেই কুকুর উপদ্রব বাড়িয়ে দিয়েছে।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়- গত মে মাসে কুকুরে কামড়ানো রোগী চিকিৎসা নিয়েছে ২৫৫জন এবং পরবর্তী জুন মাসে চিকিৎসা নিয়েছে ৩৪৩ জন। সর্বশেষ জুলাই মাসে কতজন কুকুরে কামড়ানো রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে তা তাৎক্ষণিক ভাবে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে এই সংখ্যা আগের মাসের তুলনায় বাড়তে পারে। যার ফলে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু আতঙ্কের পাশাপাশি নতুন করে ভাবাচ্ছে কুকুরে কামড়ানোর ফলে সৃষ্ট জলাতঙ্ক নিয়ে। তবে এব্যাপারে জেলা চিকিৎসালয় সূত্র জানিয়েছে রোগীর সংখ্যা যতই বাড়–ক পর্যাপ্ত সেবা দিতে তারা প্রস্তুত রয়েছে। মজুদ রয়েছে বিপুল সংখ্যক ভ্যাকসিন। বিনামূল্যে কুকুরে কামড়ানো রোগীদের ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হচ্ছে।
চকরিয়া থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মীরা রুদ্র ও সদরের খুরুস্কুল থেকে আসা সাগরিকা দে জানান- কুকুরে কামড়ানোর কারণে ৪/৫টি ভ্যাকসিন ডোজ নিতে হয়। তারা এর আগে প্রথম কয়েকটি ডোজ প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে প্রতিবার ১২০ টাকা খরচ করে নিয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে জেলা সদর হাসপাতালে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হয় জেনে তারা এখানে চিকিৎসা নিতে আসে এবং বিনামূল্যে ভ্যাকসিন নেয়।

এবিষয়ে জেলা সদর হাসপাতাল তত্ত্ববধায়ক ডা. মহিউদ্দিন জানান- চলতি বছরে গত ৬মাস ধরে হাসপাতালে ভ্যাকসিন সরবরাহ বন্ধ ছিলো। একারণে অনেকেই এই সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। গত ৪জুন থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যক ভ্যাকসিন এসেছে। এখন সবাই নিয়মিত বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিতে পারবে।

এদিকে কক্সবাজার পৌর এলাকাসহ সমগ্র জেলাজুড়ে কুকুরের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যাক্তিবর্গ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা সেবা দিতে প্রস্তুত থাকলেও বিষয়টি এভাবে ভাবা উচিৎ যে- সাবধানতা বা সতর্কতা চিকিৎসা নেওয়ার চাইতে উত্তম। এজন্য স্থানীয় সচেতন মহল কুকুরের উপদ্রব বেড়ে যাওয়া এবং কুকুরকে যথাসময়ে নিয়ন্ত্রণে না আনার জন্যে পৌর কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করছে। যদিও প্রতি বছর পৌর প্রশাসন কুকুর নিধনে দৃশ্যমান কর্মসূচি হাতে নিয়ে থাকে। কিন্তু গত দুই মাস ধরে কুকুরের উপদ্রব বেড়ে গেলেও পৌর প্রশাসনের কোনো হদিস মিলছে না বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

এবিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলে পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান প্রতিবেদককে জানান- সর্বশেষ মাস দুয়েক আগে কুকুর নিধন করা হয়েছিলো। এটা নির্ধারিত একটি সময় ধরে করতে হয়। তারপরও সামনে যেহেতু ভাদ্র মাস সেহেতু জনগণের কথা মাথায় রেখে পুণরায় কুকুর নিধন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য যে, আমাদের দেশে জলাতঙ্ক রোগে বছরে ২০ হাজার মানুষ মারা যায়। ভাইরাসজনিত র‌্যাবিস জীবাণু দ্বারা মানুষ আক্রান্ত হলে যে রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায় তাকে বলা হয় জলাতঙ্ক রোগ। এটি একটি মারাত্মক রোগ। যা একবার হলে রোগীকে বাঁচানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। বা বাঁচানো সম্ভব হয় না। তবে বর্তমানে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে। কুকুরে কামড়ানোর সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ মতে ভ্যাকসিন নেয়া শুরু করলে ভয়ের কিছু নেই।

কুকুর, শেয়াল, বিড়াল, বানর, গরু, ছাগল, ইঁদুর, বেজি (নেউল), র‌্যাবিস জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে এবং মানুষকে কামড়ালে এ রোগ হয়। এসব জীব জানোয়ারের মুখের লালায় র‌্যাবিস ভাইরাস জীবাণু থাকে। এ লালা পুরানো ক্ষতের বা দাঁত বসিয়ে দেয়া ক্ষতের বা সামান্য আঁচড়ের মাধ্যমে রক্তের সংস্পর্শে আসলে রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং জলাতঙ্ক রোগ সৃষ্টি হয়। তবে মনে রাখা দরকার- শুধুমাত্র কুকুরে কামড়ালেই জলাতঙ্ক রোগ হয় না। যদি কুকুরটির বা কামড়ানো জীবটির লালায় র‌্যাবিস জীবাণু না থাকে। এটি ঠিক যে- আমাদের দেশে শতকরা ৯৫ ভাগ জলাতঙ্ক রোগ হয় কুকুরের কামড়ে।

এছাড়াও কুকুরের জন্য ভাদ্র আশ্বিন এই দুইমাস এক বিশেষ সময়। এই দুইমাস কুকুরের প্রজনন কাল । এই সময়ে অলিতে গলিতে কুকুরের ঘেউ ঘেউ ডাক মানুষের মনে যত না বিরক্তি জন্মায়, তার চেয়ে বেশি জন্মায় ভয়। ভয় হলো কুকুরের কামড়ের ভয়, কখন যেন কুকুরের কামড় খেতে হয়! এই দুইমাস সময় ভয়ে ভয়ে পার করতে পারলেই, আর তেমন একটা ভয় মানুষের মনে থাকে না।